বিদায় জানিয়ে
দায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য
ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো হোক সুন্দরতর বিদায়ের ক্ষণ ।মৃত্যু নয় ধ্বংস নয়, নহে বিচ্ছেদের ভয়। শুধু সমাপন। আজকের বিদায়ী অনুষ্ঠানের উপস্থিত মাননীয় প্রধান শিক্ষক, আমার সহকর্মী শিক্ষক শিক্ষাবৃন্দ সবার প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। এবং মঞ্চে সম্মুখে উপবিষ্ট আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের জানাই আমার হৃদয়ের অন্তস্থলের এর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
বিদায় মানে যেন বিচ্ছেদের এক কবিতা, যে কবিতা হৃদয়কে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে, দু চোখ হয় অশ্রু সজল। আজ তোমাদের বিদায় বেলা। বিদায় অনুষ্ঠান। এই বিদায় কেবল ক্ষণিকের আজীবনের জন্য। হৃদয়ের স্মৃতিপটে তোমরা আমাদের হৃদয় থেকে যাবে। এই বিদায় আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, নিজের অমৃত সম্ভাবনা মিলে ধরায়, নিজের যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রম নিয়ে নিজের জীবন গড়ার পদক্ষেপ।
এই বিদায় নেয়াটাও যোগ্যতার। দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করে, পড়াশোনা করে তোমরা এক একটা ধাপ উত্তীর্ণ হয়ে আজ বিদায়ের লক্ষ্যে উপস্থিত হয়েছো আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য।
বিদ্যালয়ের প্রতিটি মুহূর্তে তোমাদের স্পর্শ লেগে আছে, এই বিদায়ের প্রাঙ্গনে তোমরা ভরিয়ে রেখেছো তোমাদের সরব উপস্থিতি মাধ্যমে, ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও সাংস্কৃতিক প্রতিভার মাধ্যমে এই বিদ্যালয়কে তোমরা গর্বিত করেছ, সম্মানিত করেছ আমাদের সকলকে।
এই বিদ্যালয় থেকে তোমাদের শারীরিক বিদায় হলেও বিদ্যালয়ের অঙ্গন থেকে তোমাদের স্মৃতি কখনো মুছে যাবে না। এই জীবনের খেলাঘরে এই বিদায় যতটা দুঃখের ঠিক ততটাই আনন্দের কারণ জীবনের অমৃত সম্ভাবনা দেখে তোমরা এগিয়ে যাবে, মুঠো মুঠো কুড়িয়ে নেবে জীবনের সাফল্য সুধা।
জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তোমাদের জীবনকে বৈচিত্র্যময় করবেন। তাই বলি এগিয়ে যেতে হলে মাঝে মাঝে ছেড়ে যেতে হয়, কাটাতে হয় মায়ার ইন্দ্রজাল।
তাই হযরত আলী রাঃ একটা বিখ্যাত উক্তি সবসময় মনে রাখবে, জীবন হোক কর্মময়, নিরন্তর ছুটে চলা, ঘুমানোর জন্য কবর পরেই রয়েছে। তোমাদের জীবনকে এমন ভাবে তোমরা সাজাবে যেন তোমাদের প্রতিটি আনন্দ তোমরাও উপভোগ করতে পারো। আলসেমি করে কেউ কখনো বড় কিছু হতে পারেনি।
যারা নিজের কম্ফর্টজন ভেঙে পরিশ্রম করেছে তারাই স্পর্শ করেছে সাফল্য চোড়া। তারাই অর্জন করেছে সম্মান ও খ্যাতি। কখনো বলবে না আমার তো মেধা নেই, আমি তো ব্রিলিয়ান্ট নই, মেধার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিশ্রম।
তুমি যত জানবে, যত পড়বে, যত অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তোমার এগিয়ে চাওয়া কেউ রোধ করতে পারবে না। বিগত কয়েক বছর ধরে তোমাদেরকে আমাদের আন্তরিক ও ভালোবাসা অর্পণ করেছি। প্রয়োজনে কঠোর আচরণ করেছি যাতে তোমরা নিজেদের পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস হও। যেন পরীক্ষায় ভালো সফল অর্জন করতে পারো।
এই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ তোমাদের কখনোই ভুলবে না। আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো, বাগানে ফুটে থাকা ফুলের সৌন্দর্যের মতো আমরা আমাদের হৃদয়ের তুমাদের আজিবন রেখে দিব তোমরা আমাদের হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবো।। তোমাদের এই বিদায় শুভ হোক।
তোমরা নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এই সময়টা খুব স্পর্শকাতর। একেবারেই সময় নষ্ট করা যাবে না। ফেসবুক,Youtube ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসব তোমরা মনোযোগ নষ্ট করবে, এসবের কপাট বন্ধ করে দাও। অতিরিক্ত রাত জাগা যাবেনা অবশ্যই ভালোভাবে ঘুমাবে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
কারণ এই সময়টা আর কখনোই ফিরে পাবে না এ সময়টা আর কখনোই ফিরে পাবে না। কথায় আছে সময় গেলে সাধন হবে নাএই কথাটি সবসময় মনে রাখবে । জীবনে অনেক কিছুই করতে পারবে কিন্তু পড়াশোনা শুরুটা গুরুত্বটা সঠিক সময় দিতে হবে। যারা পড়াশোনা না করে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করেছে তারা অনেকপদে পদে কষ্ট পাচ্ছে। এজন্য কখনো পড়াশোনাকে অবহেলা করবে না।
জীবন বড়ই কঠিন। তোমরা শিক্ষকের কথা মেনে চলো, যার বাবা-মার কথা মেনে চলো, তোমরা কে নিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ কর। বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল কর এবং সর্বোপরি তোমাদের নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলো। জীবনে সব সময়ই বড় স্বপ্ন দেখবে এবং সেটা অর্জনের জন্য পরিশ্রম করবে দেখবে তোমারা অনেক দূর এগিয়ে গেছো। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে উপস্থিত সকলের প্রতি আমি আবারো আমার শ্রদ্ধেয় ভালোবাসা জানাচ্ছি।
এবং শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে আমার বক্তব্য শেষ করার আগে উরুগুয়ে একজন বিখ্যাত সাংবাদিক এদুয়ার্দোর একটা উদ্ধতি সবার কাছে শেয়ার করছি।
ইতিহাস কখনো বিদায় বলেনা, বলে আবার দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন